'আমি তাকে দেখেছি বায়বীয়, অর্থহীন লাফ দিতে' যদিও মূল অবলম্বন তুষার রায়ের জীবনের আখ্যান, কিন্তু উপন্যাসটি সমকালের চালচিত্রও বটে। লিখছেন অমর মিত্র অংশুমান কর এর আগে বিনয় মজুমদারকে নিয়ে~~~িখছে অনুরুদ্ধ হয়ে। সে কবি। তার প্রেমিকা অসদুপায় অবলম্বন করে একটি কলেজে চাকরি পেয়ে তার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। ২২ এপ্রিল ২০২৪, কলকাতা হাইকোর্টের রায় বেরিয়েছে, দুর্নীতির দায়ে স্কুল শিক্ষকদের গোটা প্যানেল বাতিল। শুভময়ের চাকরি নেই। বয়স পেরিয়ে গেছে। টিউশনি করে। কোর্টের রায়ে চাকরি-বঞ্চিত, ধর্মতলায় ধর্নায় বসা যোগ্য প্রার্থীদের বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল। এই শুভময়দের পরিবারে বাবার সামান্য পেনশন অবলম্বন। মা দুরারোগ্য অসুখে শয্যাশায়ী। সে লিখছে কবি তুষার রায়কে নিয়ে উপন্যাস। কবির জীবনের সঙ্গে নিজের জীবন মিলেমিশে যাচ্ছে। এই উপন্যাস এই কারণেই উপন্যাস। না হলে হত জীবনী।তুষার রায় আমাদের অগ্রজ ছিলেন। অকালে চলে গেছেন। তাঁর পরিবার, একটি গুজরাটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেম এবং ব্যর্থতা, জীবনের বহমানতা নিয়েই এই উপন্যাস। শুভময় লিখছে। অংশুমানের উপন্যাসের প্রধান চরিত্রটি উপন্যাস লিখছে এই সময়ের আগুনে ঝলসে গিয়ে। ফলে উপন্যাসটি হয়েছে সমকালের, অতীতের নয়, বর্তমানের। কিন্তু অতীতই প্রধান অবলম্বন। তুষার রায়ের জীবন, কবিতা, দীর্ঘ গদ্য— সব। উপাদান এসেছে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকেও। ভাস্কর চক্রবর্তীর স্মরণালেখ্য থেকেও। আসলে অংশুমান যে মৃত্যু-মৃত্যু খেলার কথা লিখেছেন, তা ছিল অনেক নেশা করে চলন্ত রাস্তা পার হওয়ার এক খেলা যা তুষার খেলতেন। সবুজ সিগনালে গাড়ি ছুটছে, তার ভিতর দিয়ে তুষার এপার-ওপার করছেন। যে কোনও মুহূর্তে সে মরে যেতেই পারে। সেই মৃত্যু-মৃত্যু খেলার ভিতরে পড়ে গেছে যেন এই প্রজন্ম। শুভময়। উপন্যাসটি অনেকটাই ডকুমেন্ট-নির্ভর। ডকু-নভেল হয়েও আসলে যে মৌলিক এক সৃজন তা শেষের পাতায় এসে বোঝা যায়। উপন্যাসের কাহিনি বলতে তুষারের জীবন, অকাল-প্রয়াণের আগে বেঁচে থাকার নানা মুহূর্ত, সৃজনের নানা সংশয় ও সৃজন। এবং শুভময়ের বেঁচে থাকার কঠিন প্রয়াস, মায়ের অসুখ, পুঁজি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে— তুষারের জীবনও অনেকটাই এমন হয়েছিল। তাদের প্রাচীন জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তখন, অর্থ বলতে কিছুই নেই। সে লেখে, বই পড়ে, নেশা করে, তার যক্ষ্মা হয়,~~~ লিখছে এই সময়ের আগুনে ঝলসে গিয়ে। ফলে উপন্যাসটি হয়েছে সমকালের, অতীতের নয়, বর্তমানের। কিন্তু অতীতই প্রধান অবলম্বন। তুষার রায়ের জীবন, কবিতা, দীর্ঘ গদ্য— সব। উপাদান এসেছে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকেও। ভাস্কর চক্রবর্তীর স্মরণালেখ্য থেকেও। আসলে অংশুমান যে মৃত্যু-মৃত্যু খেলার কথা লিখেছেন, তা ছিল অনেক নেশা করে চলন্ত রাস্তা পার হওয়ার এক খেলা যা তুষার খেলতেন। সবুজ সিগনালে গাড়ি ছুটছে, তার ভিতর দিয়ে তুষার এপার-ওপার করছেন। যে কোনও মুহূর্তে সে মরে যেতেই পারে। সেই মৃত্যু-মৃত্যু খেলার ভিতরে পড়ে গেছে যেন এই প্রজন্ম। শুভময়। উপন্যাসটি অনেকটাই ডকুমেন্ট-নির্ভর। ডকু-নভেল হয়েও আসলে যে মৌলিক এক সৃজন তা শেষের পাতায় এসে বোঝা যায়। উপন্যাসের কাহিনি বলতে তুষারের জীবন, অকাল-প্রয়াণের আগে বেঁচে থাকার নানা মুহূর্ত, সৃজনের নানা সংশয় ও সৃজন। এবং শুভময়ের বেঁচে থাকার কঠিন প্রয়াস, মায়ের অসুখ, পুঁজি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে— তুষারের জীবনও অনেকটাই এমন হয়েছিল। তাদের প্রাচীন জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তখন, অর্থ বলতে কিছুই নেই। সে লেখে, বই পড়ে, নেশা করে, তার যক্ষ্মা হয়, মেদিনীপুরের স্যানেটোরিয়ামে তার জায়গা হয়। কবি যখন কবিকে নিয়ে লেখেন, তার মাত্রা অন্য হয়। যেমন, কফি হাউসে শামসের আনোয়ারের সঙ্গে তুষারের দেখা হওয়ার বর্ণনা। তাদের যে কথাবার্তা হতে পারে, তা নিশ্চয়ই উপাদান পেয়ে লেখা নয়। কফি হাউসে দুই প্রধান কবির আলাপ এই উপন্যাসের উজ্জ্বলতম অংশ। এই উপন্যাসে তুষার রায়ের জীবনের অংশগুলি তুষারঝড়-১,২,৩ ইত্যাদি শিরোনামে আখ্যায়িত হয়েছে। পরিচ্ছেদের শিরোনামে তুষারের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। উপন্যাসের আরম্ভে শামসের আনোয়ারের এক এপিগ্রাফ রয়েছে। তুষারের কথা তা:'আমি ওই রূপবান যুবকের হঠাৎ, বিহ্বল/ উড়ে যাওয়া দেখেছি/ কফি হাউসে, চায়ের দোকানে চুল সুদ্ধ, জুতো সুদ্ধ/ আমি তাকে দেখেছি বায়বীয়, অর্থহীন লাফ দিতে'।উপন্যাসটি এমন এক আবহাওয়া তৈরি করে, এমন ঘোর লাগায় যে, আমি তা থেকে পরিত্রাণই পাই না। এলোমেলো লেখা হল এলোমেলো কবির কথা, এক সুশৃঙ্খল কথা সাহিত্যিকের কলমে পড়তে পড়তে। মৃত্যু মৃত্যু খেলা অংশুমান কর। ধানসিড়ি। ২৫০ টাকা